বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় গাওয়া ঘি সবার উপরে থাকবে। গাওয়া ঘি মানে গাইয়ের দুধ থেকে বানানো ঘি। কিন্তু কালক্রমে খাঁটি ঘি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা ঘিয়ে ভেজাল মেশাচ্ছে। মানুষকে ঘিয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ সম্পর্কে বিভ্রান্ত করছে।
চলুন জেনে নেই – যেভাবে নকল ঘি বানায়, খাঁটি গাওয়া ঘি চেনার উপায়, ঘি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।
যেভাবে নকল গাওয়া ঘি বানায় :
সামান্য পরিমান আসল গাওয়া ঘিয়ের সাথে প্রচুর ডালডা এবং পাম তেল মিশিয়ে নকল গাওয়া ঘি বানায়। কালার আনার জন্য রঙ মেশায় আর ঘ্রাণ আনার জন্য মেশায় রাসায়নিক কেমিকেল।
প্রশ্ন হলো – কী পরিমাণ খাঁটি ঘিয়ের সাথে কী পরিমাণ ভেজাল মেশায়?
সাধারণত ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘিয়ের সাথে ৬০০ গ্রাম ডালডা আর ৩০০ গ্রাম পাম অয়েল দিয়ে মোট এক কেজি বানানো হয়। নকল ঘি এমনভাবে কৌটাজাত করা হয়, যেন পুরো বোতলের ঘি একই রঙের দেখা যায়। ক্রেতার হাতে সাধারণত পৌঁছায় জমাটবাঁধা ঘি।
এছাড়াও গরুর দুধের বদলে অনেকেই মহিষের দৈ দিয়ে ঘি বানায়। মহিষের ঘিও স্বাদ এবং পুষ্টিকর। যদিও গরুর দুধের ঘি থেকে স্বাদ এবং রং দুইটাই আলাদা। দুঃখের বিষয় হলো – গরু বা মহিষ – সব ঘিয়েই ভেজাল মেশানো হয়।
যেভাবে আসল গাওয়া ঘি চিনবেন :
হাতের তালুতে একটু ঘি রাখুন। যদি ঘি শরীরের তাপে একটা নির্দিষ্ট সময় পর গলতে শুরু করে, তবে বুঝতে হবে ঘি খাঁটি। কারণ খাঁটি ঘি সামান্য উত্তাপেই গলতে শুরু করে। অথবা সামান্য আঁচে আগুনের উপর রাখুন। যদি ঘি গলতে প্রচুর সময় নেয়, কিংবা গলা ঘি হলুদ রঙের হয়, তবে বুঝতে হবে – ঘিয়ে ভেজাল আছে।
গলা ঘিকে ঠান্ডা করে স্বচ্চ বোতলে নিন। এরপর ফ্রিজে রাখুন। জমাট বাধাঁর পর বের করে দেখুন। যদি বোতলে আলাদা আলাদা রঙের লেয়ার তৈরি হয়, তবে বুঝতে হবে, ঘি খাঁটি নয়। এর সাথে পাম তেল আর ডালডা মেশানো আছে। একারণেই বিভিন্ন স্তর পড়েছে।
ভেজাল মেশানো ঘি খাবেন না। বিশেষত শিশুদের খাওয়াবেন না। কারণ নকল ঘিয়ে মেশানো রঙ ও ফ্লেভার শরীরে চর্ম ক্যান্সার ও নানা প্রকার জটিল রোগ বাধাতে পারে।
গরুর দুধের তৈরি ঘিয়ের উপকারিতা :
ঘি কে মূলত আয়ুর্বেদ ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঘি তে থাকা চর্বি লিভারকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ই এবং ভিটামিন ডি ইত্যাদি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি তরান্বিত করে। এছাড়াও ঘিয়ের নানা উপকার আছে। যেমন –
- গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যা দূর করে।
- মুখের ঘা দূর করে।
- চোখের জ্যাতি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ,উদ্বেগ কমায়।
- ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- আগুনে পোড়া ক্ষত দ্রুত ভালো করে।
- ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে।
- শরীরের মিনারেল ও ফ্যাটি এসিড ভালোভাবে শোষিত হয়।
- ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে ঘি। এছাড়া সহ যেকোন সমস্যা দূরে রাখে।
ঘি খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম :
সকালে খালি পেটে ঘি খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। এক চা চামচ ঘি খেলে সারাদিন শরীর চাঙ্গা থাকে। শক্ত কাজে জোর পাওয়া যায়। বিকেলে ঘি খেলে ততো ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। বরং হজমে সমস্যা হয়। তবে রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ ঘি খেলে ঘুম ভালো হয়। এটা বৃদ্ধ বয়সীদের জন্য বেশি কার্যকর।
দুধ থেকে তৈরি যতগুলো খাবার রয়েছে, ঘি এর মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি খাবার। ঘিতে থাকা নানারকম পুষ্টি উপাদান শরীরের নানা যা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহীত খাঁটি গাওয়া ঘি পেতে এখুনি অর্ডার করুন দেশজে ।