মরিচের গুঁড়া না হলে আমাদের রান্না হয় না। নিত্য দিনের খাদ্য উপাদান মরিচ। শুধু ঝাল নয়, স্বাদ এবং ঘ্রাণের জন্যও মরিচের দারুণ কদর রয়েছে। মশলাজাত উপাদান হিসেবে পরিচিত মরিচের গুঁড়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণ উপকারি।
কিন্তু সমস্যা হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা মরিচের গুঁড়ায় ভেজাল মেশায়। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মানুষকে ঠেলে দেয় কঠিন অসুখের দিকে। একজন স্বাস্থ্য-সচেতন নাগরিক হিসেবে, পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিটি হিসেবে – ঘরে ভেজালহীন মরিচের গুঁড়া নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যাতে সহজে পালন করতে পারেন, এজন্যই এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে – মরিচের গুঁড়ায় কীভাবে ভেজাল মেশায়, কীভাবে ভেজাল মরিচের গুঁড়া চিনতে পারবেন এবং সবশেষে, মরিচের গুঁড়ার উপকারিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়।
মরিচের গুঁড়ায় মেশানো ভেজাল উপাদান :
সাধারণত ১ কেজি গুঁড়া মরিচের সাথে প্রায় ৪ কেজি পরিমাণ ভেজাল মেশানো হয়। সাথে মেশানো হয় রঙ। ওজন বাড়ানোর জন্য সাধারণত মেশানো হয় কাঠের গুঁড়া, ধানের কুঁড়া, ঘাসের বীজ, কাউনের গুঁড়া, আটা, ময়দা, সুজি ইত্যাদি।
রঙের জন্য ব্যবহার হয় সীসা মিশ্রিত উপাদান ক্রোমেট। গুঁড়ার সাথে ক্রোমেট মেশালে উজ্জল লাল রঙ তৈরি হয়। রঙের কারণে তখন আর চেনা যায় না, কোনটা আসল মরিচের গুঁড়া, আর কোনটা নকল?
আপনি হয়তো ভাবছেন, তাহলে ঝাল হয় কীভাবে? ঠিকই ধরেছেন।
মরিচের বিশেষত্ব হলো ঝাল – যা মূলত মরিচের প্রধান উপাদান ক্যাপসাইসিন। এই ক্যাপসাইসিন রাসায়নিক পদার্থ দিয়েও বানানো হয়, যাকে বলা হয় সিন্থেটিক ক্যাপসাইসিন। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সিন্থেটিক ক্যাপসাইসিন মিশিয়েই ভেজাল মরিচের গুঁড়ায় ঝাল তৈরি করে। এরপর প্যাকেটে পুরে যখন আপনার সামনে হাজির করে, আপনি ঘূণাক্ষরেও টের পান না যে, এটা ভেজাল মরিচের গুঁড়া।
যেভাবে বুঝবেন মরিচের গুঁড়ায় ভেজাল আছে কিনা :
এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে এক চা চামচ মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিন। দেখবেন – বেশিরভাগ গুঁড়াই পানির নিচে চলে যাচ্ছে। গ্লাসের ওপর ভাসতে থাকবে পাতলা একটি স্তর। সরের মতো এই স্তরটাকে আলগোছে চামচ দিয়ে তুলে হাতের তালুতে রাখুন। ধীরে ধীরে সেটা ঘষতে থাকুন। খসখসে শক্ত দানাদার কিছু লাগলে বুঝবেন ইটের বা বালির গুঁড়ো মেশানো আছে।
যদি দেখেন যে, নাড়ানো ছাড়াই পানিতে লাল রঙ মিশে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন – রঙ মেশানো হয়েছে। কারণ মরিচের গুড়া সাধারণ পানিতে গলে না। সামান্য ফ্যাকাসে লাল রঙ ছড়ায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মরিচের গুঁড়ায় ভেজাল ঝাল মেশানো কি না – সেটা আপনি জানতে পারবেন না। এটা শুধু ল্যাবেই টেস্ট করে বের করা সম্ভব।
গুঁড়া মরিচের উপকারিতা :
- গুঁড়া মরিচ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এটার ভেষজ উপাদান শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
- গুঁড়া মরিচ পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে, অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে হজমশক্তি উন্নত করে।
- এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ক্যাপসাইসিন শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়, যা দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।
- এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, যা হার্টের জন্য ভালো।
- ক্যাপসাইসিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা গাঁটের ব্যথা ও সন্ধির সমস্যা দূর করতে পারে।
- মরিচের ঝাল নাক ও গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে, ফলে সহজে নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত গুঁড়া মরিচ খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
খাঁটি বা ভেজালহীন গুঁড়া মরিচের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি এখন অবগত।
দেশজ আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। কৃষকের কাছ থেকে খাঁটি মরিচ সংগ্রহ করে ডাঁটা ছাড়া ভাঙানো হয়। তারপর আপনার হাতে তুলে দেয়া হয় আপনার হাতে।
দেশী খাঁটি পণ্য বেচা-কেনার মাধ্যমে দেশজ আপনার সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে বন্ধ পরিকর।