ভূমিকা:
মুড়ি—এই চিরচেনা খাবারটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৃষ্টির দিনে গরম চা আর মুড়ির সাথে আলুর চপ, সন্ধ্যায় মুড়ি-মাখা কিংবা বিকেলের নাশতায় মুড়ির মোয়া—এ এক অনন্য সুখের অনুভূতি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাজারে এখন অনেক ভেজাল মুড়ি পাওয়া যায়! আর হাতের ভাজা খাঁটি মুড়ির স্বাদ দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে চিনবেন আসল মুড়ি আর ভেজাল মুড়ির পার্থক্য? চলুন, একদম ফানি কিন্তু ইনফরমেটিভভাবে দেখে নেই!
১. মুড়ির রঙ পরীক্ষা করুন:
খাঁটি হাতে ভাজা মুড়ির রঙ সাধারণত সাদাটে হলুদাভ হয়।
কিন্তু যদি দেখেন মুড়ির রঙ একদম ঝকঝকে উজ্জ্বল সাদা, তাহলে একটু সাবধান! এতে ব্লিচিং পাউডার, হাইড্রোজেন পারক্সাইড বা অন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
পরীক্ষার জন্য একটা মুড়ির দানা পানিতে ফেলে দিন। যদি দেখেন পানির রঙ একটু দুধের মতো হয়ে যাচ্ছে, বুঝবেন এতে রাসায়নিক আছে।
২. গন্ধ দিয়ে বোঝার কৌশল:
আসল মুড়ির একটা ন্যাচারাল, সুগন্ধি ধরণের গন্ধ থাকে, যা আপনাকে গ্রামে নিয়ে যাবে।
ভেজাল মুড়িতে অতিরিক্ত রাসায়নিক থাকলে একটু তীব্র কেমিক্যাল গন্ধ থাকতে পারে। সন্দেহ হলে কিছু মুড়ি হাতে নিয়ে ঘষে দেখুন, যদি বাজে গন্ধ বের হয়, তাহলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
৩. মুড়ি কি বেশি মচমচে নাকি সন্দেহজনকভাবে নরম?
হাতে ভাজা মুড়ি হলে সেটা সাধারণত কিছুটা শক্ত আর প্রাকৃতিকভাবে মচমচে হবে।
কিন্তু যদি দেখেন মুড়ি সন্দেহজনকভাবে বেশি ফোলাফোলা ও খাস্তা, তাহলে বুঝতে হবে এতে কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. দুধের সাথে পরীক্ষাঃ
এক মুঠো মুড়ি দুধের মধ্যে দিন।
খাঁটি মুড়ি দুধে দিলে আস্তে আস্তে ভিজবে এবং নরম হবে।
কিন্তু রাসায়নিকযুক্ত মুড়ি পানিতে দিলেই খুব দ্রুত গলে গিয়ে অদ্ভুত এক ধরনের আঠালো স্তর তৈরি করতে পারে।
৫. আগুন পরীক্ষাঃ (সতর্ক থাকুন!) :
একটি শুকনো মুড়ির দানা নিয়ে আগুনের শিখার কাছে ধরুন।
খাঁটি মুড়ি ধীরে ধীরে পোড়বে, ধোঁয়া খুব বেশি হবে না।
কিন্তু রাসায়নিক মেশানো মুড়ি পুড়লে তীব্র কালো ধোঁয়া বের হতে পারে এবং প্লাস্টিক পোড়ার মতো গন্ধ আসতে পারে।
৬. পানির পরীক্ষাঃ
এক মুঠো মুড়ি পানিতে ফেলুন।
খাঁটি মুড়ির বেশিরভাগই পানিতে ভেসে থাকবে, কিন্তু রাসায়নিক মেশানো মুড়ি দ্রুত ডুবে যেতে পারে। কারণ এতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং কৃত্রিম উপাদান থাকতে পারে।
৭. ফ্যানের নিচে রেখে পরীক্ষা করুন!
এক চামচ মুড়ি ফ্যানের নিচে রেখে দিন।
খাঁটি মুড়ি বেশি নড়বে না, কারণ এটা তুলনামূলক ভারী হবে।
কিন্তু যদি দেখেন যে মুড়িগুলো বাতাসে খুব বেশি উড়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে এতে অতিরিক্ত ফোলানোর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে।
৮. স্বাদ পরীক্ষা করুন:
হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ হবে মিষ্টি মিষ্টি এবং হালকা বাদামি ঘ্রাণ থাকবে।
কিন্তু যদি কোনো মুড়ি খাওয়ার পর জিভে এক ধরনের কটু ভাব বা হালকা ঝাঁঝালো স্বাদ লাগে, তাহলে বুঝবেন কিছু একটা সমস্যা আছে!
কেন ভেজাল মুড়ি ক্ষতিকর?
ভেজাল মুড়িতে ব্যবহৃত রাসায়নিক শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
হজমের সমস্যা, পেটের ব্যথা, অ্যাসিডিটি হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হিসেবে লিভার এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে।
শিশুদের জন্য ভেজাল মুড়ি বিশেষভাবে বিপজ্জনক!
ভেজালমুক্ত মুড়ি পাওয়ার উপায়:
পরিচিত বা বিশ্বস্ত দোকান থেকে মুড়ি কিনুন।
গ্রামের মুড়ি বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে, কারণ তারা সাধারণত হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করেন।
বাসায় মুড়ি ভাজার চেষ্টা করুন, এতে ১০০% নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন!
মুড়ি খেতে সবাই ভালোবাসে, কিন্তু খাঁটি মুড়ি খাওয়া নিশ্চিত করাও খুব জরুরি। একটু সতর্ক হলেই আমরা সহজেই ভেজাল মুড়ি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি। তাই, আজ থেকে মুড়ি কেনার আগে ছোট্ট একটা পরীক্ষা করুন আর সুস্থ থাকুন!